শনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ০২:৫৭ পূর্বাহ্ন

সাতক্ষীরা খলিশাখালির মাছের ঘের নিয়ে চরম উত্তেজনা

সাতক্ষীরা খলিশাখালির মাছের ঘের নিয়ে চরম উত্তেজনা

দখলকৃত ঘেরটি উদ্ধারে মালিকদের করুণ আকুতি

বিশেষ প্রতিবেদন:

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালিতে অবস্থিত বৃহৎ মাছের ঘেরটি লুটপাট করে দখলে নিয়েছে একটি সন্ত্রাসীগ্রুপ। এই দখলকে কেন্দ্র করে একাধীকবার হামলার ঘটনায় হত্যাকাণ্ডসহ বহু হতাহত হয়েছে। গত শনিবারেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। যার প্রেক্ষিতে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কারণ খলিশাখালীতে অবস্থানরত ভূমিদস্যুরা অধিকাংশই বহিরাগত। সেখানে বর্তমানে বেশ কয়েকটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী অবস্থান নিয়েছে। অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক বেচাকেনা, জুয়ার আসরসহ সব ধরনের অপকর্ম বর্তমানে খলিশাখালীতে সংঘটিত হচ্ছে। যেকোন মুহূর্তে সেখানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। খলিশাখালীতে অবস্থানরত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী বাহিনীগুলো ক্রমশ উপজেলা জুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টির মাধ্যমে দেবহাটাকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। যেকোনো সময় ঘটতে পারে আরো বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় একাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও দুর্ধর্ষ ক্যাডারগোষ্ঠী ঘেরটির মালিকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, হত্যার চেষ্টা করে তাদের উপর একাধীকবার হামলা চালাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো হলেও এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
জমির মালিক ভূক্তভোগী শাহজাহান গাজী, তালেব বোদ্ধ, শুনিল স্বর্ণকার, শিল্পী খাতুনসহ আরো অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাদের মালিকানা প্রায় ১৬৭৫ বিঘা জমি সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ চক্র গত ২৯ মে ২০২৩ তারিখে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়কার সুযোগ নিয়ে দখল করে নেয়।
অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে মোঃ আজিজুল ইসলাম পাড়, মোঃ আনারুল ইসলাম, সাইফুল, আকরম, মকরম, মোঃ ইকবাল মাসুদ, রবিউল ইসলাম বোল্লা, রিয়াজ সরদার, আরিফ, রিপন, শরিফুল ইসলাম কালু সহ আরও অনেকে।
ঘেরের মালিকপক্ষ ভূক্তভোগীরা জানান, তারা একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসীদের হামলায় গত শনিবার কমপক্ষে ১০জন আহত হয়েছে। অপহরণ করা হয়েছে দুইজনকে। ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে কমপক্ষে ২০টি বাড়িতে। পরবর্তীতে জরুরী সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ গিয়ে ভূক্তভোগীদের উদ্ধার করে।
হামলায় আবুল হোসেনের স্ত্রী ভাদ্দুরী, রবিউলের মা খাদিজা, তার ভাই তৈমুরের স্ত্রী তুলি , চালতেতলার মজিদের স্ত্রী সখিনাসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এদের মধ্যে ভাদ্দুরি, তুলি ও খাদিজাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও কয়েকজনকে সখীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা খলিষাখালিতে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
এর আগে গত বছরের ১ নভেম্বর খলিশাখালির মৎস্যঘের এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার অভিযানের সময় গণপিটুনিতে কামরুল ইসলাম (৪০) নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তি উপজেলার খলিশাখালি এলাকার মৃত আবু বকর গাজীর ছেলে। এ সময় আরো ৬ ব্যক্তিকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
সেনাবাহীনি ও আইনশৃঙ্খলা বাহীনির ভাষ্যমতে, গত ৫ আগস্টের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবনতি হওয়ার সুযোগে খালিশাখালি এলাকায় অস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা মজুদ রেখে মাছের ঘের দখল, এলাকায় ডাকাতিসহ নানা অপরাধ করে আসছিল আকরাম হোসেন, আরিফুল ইসলাম পাড়, কামরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম গাজীসহ তাদের বাহিনীর সদস্যরা। সেই মোতাবেক দেবহাটার তিনটি অবস্থান থেকে এক সাথে অপারেশন চালনো হয়। এসময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে প্রথমে তারা ইট-পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পরে দেশীয় বোমা এবং ককটেল বোমা ছুড়তে থাকে। এমনকি দূর থেকে আমাদের লক্ষ্য করে পাইপগান দিয়ে গুলিও চালায়। এক পর্যায়ে স্থানীয় দেড় শতাধিক বাসিন্দারা ডাকাত কামরুলসহ কয়েকজনকে ধরে ফেলে। বিক্ষুব্ধ জনতা এসময় ডাকাত কামরুলকে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে সেনা সদস্যরা আহত কামরুলকে উদ্ধার করে দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তৃব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত কামরুল একজন দণ্ডিত অপরাধী এবং ডাকাত ছিলেন। অন্যান্য আটককৃত অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দেবহাটা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এসময় সেখান থেকে ৫টি রামদা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ৮০০ গ্রাম বারুদ, ৪টি মোবাইল ফোন, ১৫টি দেশীয় হ্যান্ড গ্রেনেড (হাত বোমা), ৭ প্যাকেট স্প্রিন্টার, ৩৯ টি দেশীয় ছোট হ্যান্ড গ্রেনেড (হাত বোমা) উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, থানা/উপজেল দেবহাটা মৌজা পারুলিয়া সি.এস ১৮১২ নং খতিয়ানে লিখিত খাষ ৪০৯.২০ এক থানার মৌজার জয়ানাথপুর সি.এস ৫৬৫ নং খতিয়ানে লিখিত ১১৬৫৭ একল এন ৫৫৫.৭৭ একর জমিতে চন্ডীচরন দোষ রকম ২ আনা অংশে পৃথক পৃথক ২টি জমা থাকে চণ্ডাটরন মোব তার অংশের জামতে স্বত্ববান ও দখলাদার থাকাকালে ২ পুত্র যোগেন্দ্র নাম ঘোষ ও বসন্ত কুমার ঘোষকে ওয়ারেশ রাখিয়া মৃত্যুবরন করেন। যোগেন্দ্র নাথ ঘোষের ২ পুত্র যতীন্দ্র নাথ ঘোষ ও নিতাই চরন ঘোষকে এবং তদপরে বসন্ত কুমার ঘোষ ৪ পুত্র রঘুনাথ ঘোষ ওরফে রঘুনানন্দ ঘোষ, সনৎ কুমার ঘোষ, অজিত কুমার ঘোষ ও তারক নাম ঘোষকে ওয়ারেশ রাখিয়া মৃত্যু বরন করেন। সাবেক ৫৬৫ ও ১৮১২ নং খতিয়ানের প্রজা চন্ডীচরন ঘোষের ক্রমিক ওয়ারেশগন অর্থাৎ যতীন্দ্র নাথ ঘোষ দিং বিক্রয় ঘোষনা করেন যে, যে যতটুকু জমিতে আবাদ করিতেছেন তারা ততটুকু জমিতে বন্দোবস্ত পাইবেন। সেই মোতাবেক কফিল উদ্দীন ফকির। দিং পারুলিয়া মৌজার ৯.২৫ একর ভূমি আবাদ যোগ্য করিয়া চাষাবাদ করিতে থাকে। বন্দোবস্ত প্রার্থনা করিলে মালিকপক্ষ কফিল উদ্দিন ফকির বরাবর সিএস ১৮১২ নং খতিয়ানের জমি জমার মধ্য হইতে ৯.২৫ একর ভূমি গত ইং ১৩৩৫ সালের ১১ ইং মাঘ তারিখে উপযুক্ত সেলামি লইয়া ৮৩.৫০ খাজনা খাজনা ধার্যে জমা বন্দোবস্ত প্রাপ্ত লইয়া ও দখলিকার হয়েন। মালিকপক্ষের নায়েব সতীশ চন্দ্র ঘোষ খাজনাদি ও আমলনামার দখল প্রদানের কার্যাদি সম্পন্ন করেন। প্রকাশ থাকে উক্ত সি.এস ১৮১২ নং খতিয়ানের খতিয়ানের বোখরি সম্পত্তির মধ্যে প্রস্তাবটি খতিয়ানের বক্রি সম্পত্তির মধ্যে মোছাব্দি তরফদার ২২.৪৮ একর ভূমি ইমানদি শেখ ১৫.৩৮ একর ভূমি কাসেম সানা ৫.২৯ একর ভূমি লক্ষণ চন্দ্র মন্ডল ১১.৯০ একর ভূমি মঙ্গল চরণ মন্ডল অনেক অস্পষ্ট ১৬.৫৩ একর ভূমি পিতম্বর কয়াল ২২.৭৩ একর ভূমি অজিত কয়াল ৫.৮৭ একর ভূমি গিরিধর বাছাড় ১৫.৩৮ একর কার্তিক বাছাড় ১৭.৮৫ একর বায়েন বৈদ্য ২৮.৫০ একর হযরত গাজী ১৪.২৭ একর, আবুল হোসেন গাজী ১২.০০ একর,আব্দুল খালেক সরদার ১৬.৬৬ একর,ভূমি কিনু সরদার ১০.০০ একর,ভূমি নাজির আলী গাজী ২১.৯০ একর,ভূমি মতিয়ার সানা ১৫.০০একর,ভূমি সামছুর ২২.১৪ একর, গহর আলী গাজী ১৮.০০ একর

পাচু গাজী ১৮.০০ একর,জুব্বার সরদার ১৫.৩৮একর, মোনডেজ খাঁ ১১.০০একর, লোকমান সরদার ১৬.৫৩ একর তারক সানা ৬.৮০ একর,এছাক সরদার ৬.৬৬ একর ভূমি আকের আলী গাজী ৭.৬০একর,ভূমি রমজান গাজী ১১.০৬ একর,ভূমি পৃথক পৃথক ভাবে আবাদযোগ্য করিয়া চাষাকারকিতে দখলী কার থাকায় মালেক যতীন্দ্রনাথ ঘোষ দিঘির এর নিকট হইতে বাচনিক জমা বন্দোবস্ত আমলনামা মূলে বন্দোবস্ত ও কতক কতক প্রজা রেজিস্ট্রিঃ মূলে মরলে জমা বন্দোবস্ত লইয়া স্ব- স্ব বন্দোবস্তকৃত ভূমিতে স্বত্ববান দখলিকার থাকিয়া পরলোক গমন করিলে তাহাদের ওয়ারেশগন ভোগবান দখলিকার থাকেন হয়েন আছেন।

কফিলদ্দীন তার আমল কৃত বন্দোবস্ত কৃত ৯.২৫ একর ভূমির ১১১৬৯ নামের ১১১.৫০ একর ভূমির মধ্য ৯.২৫ একর ভূমিতে স্বত্ববান ও দখলিকার থাকা অবস্থায় এক মাত্র কন্যা বাদীনি আমেনা খাতুন কে রাখিয়া পরলোক গমন করায় বাদীনি ওয়ারেশ হয়ে উক্ত ভূমি প্রাপ্ত হইয়া শরিক গণের সহিত এজমালিতে চাষকার কিতে ও বর্তমানে মৎস্যা ঘেরে হারি দিয়া ভোগ বান ও দখলিকার আছেন। উক্ত মৌজায় সাবেক মালেক চন্ডি চকলা ঘোষ দিগের অধিন সি.এস ১৮১২ খতিয়ানে প্রজা তাহের সানা তার বন্দোবস্ত কৃত ৬.৮০ একর ভূমিতে স্বত্ববান ও দখলিকার থাকা অবস্থায় একমাত্র পুত্র এছাকসানা কে রাখিয় পরলোকগমন করেন। এছাক সানা পিতার ওয়ারেশ সূত্রে স্বত্ববান ও দখলিকার থাক অবস্থায় দুই পুত্র ফজর আলী, রেজাউল সানা ও স্ত্রী রিজিয়া খাতুনকে রাখিয়া পরলো গমন করেন। ফজর আলী, রেজাউল সানা ও স্ত্রী রিজিয়া খাতুন ওয়ারেশ সূত্রে ৬.৮-একর ভূমিতে স্বত্ববান ও দখল কার থাকেন হয়েন ও আছেন।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com